১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর উৎক্ষেপণ করা সোভিয়েত নভোযান স্পুটনিক- ২ এ চড়ে রাস্তার কুকুর ‘লাইকা’ মহাকাশে গিয়েছিল….।

Spread the love

লা ই কা

বাবলু ভট্টাচার্য : লাইকা একটি রুশ কুকুর, যে প্রথম জীব হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল।

১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর উৎক্ষেপণ করা সোভিয়েত নভোযান স্পুটনিক- ২ এ চড়ে ‘লাইকা’ মহাকাশে গিয়েছিল।

তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা রাশিয়া পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম মহাকাশযান স্পুটনিক-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে।

পরবর্তীতে রুশ বিজ্ঞানীরা ভাবলেন, মহাকাশে পৃথিবী থেকে কোনো প্রাণীকে পাঠানো যায় কিনা। সেই চিন্তা থেকে তারা তাড়াহুড়ো করে মাত্র চার সপ্তাহের মধ্যে তৈরি করে তাদের দ্বিতীয় স্পেসক্রাফট স্পুটনিক-২।

এটা ডিজাইন করা হয়েছিল শুধুই একটি কুকুরের জন্য। তাতে প্রধানত তিনটি জিনিস ছিল; অক্সিজেন জেনারেটর, কার্বন ডাইঅক্সাইড অবজারভার এবং কুকুরটির কেবিন ঠান্ডা রাখার জন্য একটি ফ্যান। এছাড়া কুকুরটির সাতদিন বেঁচে থাকার মতো কিছু খাবার এবং তার প্রস্রাব ও বিষ্ঠার জন্য একটি ব্যাগ।

স্পুটনিক-২ তৈরি করে ফেলার পর রুশ বিজ্ঞানীরা রাস্তার একটি কুকুরকেই বেছে নেয়। কারণ রাস্তার কুকুরদের খারাপ পরিবেশে থাকার অভ্যাস বেশি, যা তাদের অভিযানের জন্য বেশি উপযুক্ত। মস্কোর রাস্তায় বেওয়ারিশভাবে ঘুরে বেড়ানো ‘লাইকা’ নামের কুকুরটিকে তারা বেছে নিয়েছিল।

সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা জানতো কীভাবে মহাকাশে যেতে হয়, কারণ তারা ইতোমধ্যেই স্পুটনিক-১ সফলভাবে লঞ্চ করেছে। তবে তারা যেটা জানতো না সেটা হলো, মহাকাশ থেকে কীভাবে ফিরে আসতে হয়! তাই সহজেই আমরা বুঝতে পারি যে, ‘লাইকা’ নামের হতভাগা কুকুরটির জন্য এটি শুধুই একটি সুইসাইডাল স্পেস মিশন ছিল, যে মিশনে মৃত্যুই তার অবধারিত গন্তব্য।

১৯৫৭ সাল, নভেম্বরের ১ তারিখ; লাইকাকে শিকল দিয়ে বেঁধে স্পুটনিক-২ এর ছোট্ট কেবিনে প্রবেশ করানো হল। আর ওভাবেই স্পুটনিক-২ এর কেবিনে কুকুরটিকে তিনদিন রাখা হল যাতে সে মহাকাশযাত্রার সময়েও এরূপ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে।

১৯৫৭ সাল, নভেম্বরের ৩ তারিখ; স্পেসক্রাফট স্পুটনিক-২ উৎক্ষেপণ করা হল; সেই সাথে লাইকাও রওয়ানা দিল অজানা গন্ত্যব্যে, চিরদিনের জন্য। কিন্তু টেকনিশিয়ানের ভুলে মহাকাশযানের একটি অংশ রকেট থেকে আলাদা হতে পারেনি।

আসলে, একটি মহাকাশযান তৈরির জন্য চার সপ্তাহ সময় যথেষ্ট নয়। আর, এই ত্রুটির কারণে লাইকাকে বহনকারী মহাকাশযান স্পুটনিক-২ এর কেবিনে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।

কেবিনের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে লাইকার হার্টবিটও বাড়তে থাকে। তাপমাত্রা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে, একসময় কেবিনের সেন্সর থেকে সংকেত আসাও বন্ধ হয়ে যায়। সেই মুহুর্তে দূরের আকাশে ভাসমান স্পেসক্রাফটের উত্তপ্ত ছোট্ট কেবিনে শিকলে বাঁধা অবস্থায় মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকা অসহায় লাইকার অবস্থা কেমন হয়েছিল তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। প্রচণ্ড গরমে পুড়তে পুড়তে জীবনের সাথে টানা তিন ঘন্টা লড়াই করে অবশেষে হার মানে লাইকা, মহাকাশেই পরলোকগমন করে সে।

মৃত্যুর আগে লাইকা পৃথিবীকে চারবার প্রদক্ষিণ করে। ওই অবস্থায়ই ১৬২ দিন মহাকাশে ছিল স্পুটনিক-২, মৃত লাইকাকে নিয়ে ২৫৭০ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে মহাকাশযানটি৷

More From Author

ICC’s 95th AGM Spotlights Women Empowerment, Sports, Entertainment and Mental Health with PV Sindhu and Sanya Malhotra…..

প্রবীণ গুণী নাগরিকদের সম্মান জানাতে বিজয়া সম্মিলনী পালন করল দক্ষিণ কলকাতার ২৬ নম্বর ঝিলরোড এসোসিয়েশনের আবাসিক বৃন্দ….।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *