শান্তিময় রাত, স্বাস্থ্যকর জীবন: স্লিপ অ্যাপনিয়ার যত্নে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে মণিপাল হাসপাতাল, ব্রডওয়ে….।

Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ২৯ মার্চ ২০২৫: স্লিপ হেলথ সংক্রান্ত উন্নতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী মণিপাল হাসপাতাল সম্প্রতি একটি বিশেষ মেডিক্যাল ইভেন্টের আয়োজন করে। এই ইভেন্টে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে মণিপাল হাসপাতাল, ব্রডওয়ের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইএনটি এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া সার্জন ডঃ দীপঙ্কর দত্ত। তাঁরা স্লিপ হেলথের অগ্রগতি, প্রাথমিক নির্ণয়, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার (ওএসএ) মতো ঘুম সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ইভেন্টটি বিশ্ব ঘুম দিবসের (১৪ মার্চ) পরবর্তী অংশ হিসেবে আয়োজিত হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়ার (IASSA)-এর সভাপতি ডঃ বিজয়া কৃষ্ণন। তিনি ওএসএ সম্পর্কিত তাঁর অভিজ্ঞতা ও আধুনিক সার্জারির মাধ্যমে কিভাবে চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতি ঘটছে, সে সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) এমন একটি অবস্থা যেখানে ঘুমের সময় শ্বাসনালী বারবার বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে শ্বাসক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এটি শুধুমাত্র ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় না, বরং উচ্চমাত্রার নাক ডাকা, দিনের বেলায় চরম অবসাদ ও সকালে মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। প্রায়শই এই সমস্যাটি অজানা থেকে যায় এবং এর ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে। বিশ্বব্যাপী স্থূলতা ওএসএ-এর একটি প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে, তবে ভারতীয় উপমহাদেশে জেনেটিক কারণগুলি রোগ নির্ণয়কে জটিল করে তোলে। অনেক ক্ষেত্রে অ্যানাটোমিক্যাল বাধা থাকলে অস্ত্রোপচারই হতে পারে একমাত্র কার্যকর সমাধান।
ডঃ দীপঙ্কর দত্ত বলেন, “স্লিপ অ্যাপনিয়া শুধুমাত্র উচ্চ শব্দে নাক ডাকার সমস্যা নয়—এটি হৃদরোগ, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক সুস্থতার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও সিপ্যাপ (CPAP) মেশিন সাময়িক স্বস্তি দেয়, এটি ব্যয়বহুল এবং অনেক রোগীর জন্য অস্বস্তিকর। অস্ত্রোপচার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রদান করে, কারণ এটি শ্বাসনালীর অবরুদ্ধ অংশকে সরিয়ে ফেলে, যার ফলে রোগীরা কোনো বাহ্যিক সহায়তা ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে পারেন। এই সার্জারি মিনিমালি ইনভেসিভ এবং এটি রোগীর জীবনযাত্রার মানকে নাটকীয়ভাবে উন্নত করে।”
এই আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ড্রাগ-ইনডিউসড স্লিপ এন্ডোস্কপি (DISE), যা স্লিপ অ্যাপনিয়ার সঠিক নির্ণয়ে ব্যবহৃত একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এই পদ্ধতিতে রোগীকে নিয়ন্ত্রিত অ্যানেস্থেসিয়ার মাধ্যমে ঘুমের মতো অবস্থায় রাখা হয় এবং একটি নমনীয় ফাইবার-অপটিক এন্ডোস্কোপ নাকের মধ্য দিয়ে গলায় প্রবেশ করানো হয়, যা চিকিৎসকদের আসল ঘুমের সময় শ্বাসনালীর বাধাগুলি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে। এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে প্রতিটি রোগীর জন্য নির্দিষ্ট অস্ত্রোপচার পরিকল্পনা করা হয়, যা ওএসএ এবং নাক ডাকার সমস্যা স্থায়ীভাবে নিরাময়ে সাহায্য করে।
ডঃ বিজয়া কৃষ্ণন বলেন, “DISE প্রযুক্তি স্লিপ অ্যাপনিয়ার নির্ণয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এটি আমাদের রোগীর নিদ্রাবস্থায় অবরুদ্ধ অংশটি সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সাহায্য করে, ফলে অস্ত্রোপচারকে আরো কার্যকর করা সম্ভব হয়। এতে সাফল্যের হার অনেক বেশি এবং রোগীর ঘুমের মান ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।”
এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ৬০ বছর বয়সী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী গণেশ জানা তাঁর সুস্থতার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে প্রথম আমার সমস্যাটি লক্ষ্য করে। সে দেখে যে আমি ঘুমের মধ্যে কয়েক মুহূর্তের জন্য শ্বাস বন্ধ করে ফেলি এবং প্রায়ই ক্লান্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠি। এরপর আমি ডঃ দত্তের পরামর্শ নেই, এবং নিরীক্ষার পর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, কোনো মেশিনের ওপর নির্ভরশীল নই এবং আগের তুলনায় অনেক ভালো ঘুমাতে পারছি। আমার ব্যবসায়িক জীবনেও নতুন উদ্যম ফিরে এসেছে।”
স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসায় প্রাথমিক নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশেষজ্ঞ সম্মেলন রোগীদের এবং শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকদের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ করে দিয়েছে, যা রোগীর সেবার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সঠিক সচেতনতা, প্রাথমিক রোগ নির্ণয়, এবং অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রসারের ফলে স্লিপ ডিসঅর্ডারে ভোগা রোগীদের জন্য সুস্থ জীবনের পথ আরও সহজলভ্য হয়ে উঠছে।

মণিপাল হাসপাতাল সম্পর্কে:
মণিপাল হাসপাতাল ভারতের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা, যা প্রতি বছর ৭ মিলিয়নেরও বেশি রোগীকে সেবা প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটি বহুমুখী ও তৃতীয় স্তরের চিকিৎসার মাধ্যমে উচ্চমানের এবং সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মেডিকা সায়েনার্জি হাসপাতাল এবং এএমআরআই হাসপাতাল (২০২৩ সালে অধিগ্রহণ) একীভূত করার পর, বর্তমানে মণিপাল হাসপাতাল নেটওয়ার্কের ১৯টি শহরে ৩৭টি হাসপাতাল রয়েছে, যার মধ্যে ১০,৫০০+ শয্যা এবং ৫,৬০০+ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি NABH এবং AAHRPP স্বীকৃত এবং বেশিরভাগ হাসপাতাল NABL, ER, ব্লাড ব্যাংক এবং নার্সিং এক্সিলেন্স স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বিভিন্ন ভোক্তা সমীক্ষায় মণিপাল হাসপাতালকে ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত এবং রোগীদের দ্বারা সুপারিশকৃত হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

More From Author

Cambridge hosts South Asia schools conference to navigate the future of learning….

Lupin Digital Health Introduces Comprehensive Post-Procedure Home-Based Care Guide in Collaboration with the American College of Cardiology….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *