আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী তারকা লিয়োনেল মেসিকে এনে বিশৃঙ্খলায় ভরা এক ন্যক্কারজনক নাটক দেখা গেল সল্টলেক যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে…।

Spread the love

চন্দন রুদ্র : কলকাতা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫। বিদেশ থেকে ফুটবল বিশ্বকাপারদের কলকাতায় উড়িয়ে এনে এমন টাকা তোলার ব্যবসা এ বার বন্ধ হোক। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আজকের ‘মেসিকাণ্ড’ বাংলার মুখ পোড়াল।

দিয়াগো মারাদোনাকে এনে মহেশতলায় ফুটবল অ্যাকাডেমির উদ্বোধন, আর্জেন্টিনার ফুটবল রাজপুত্র মারাদেনার পায়ের ছাপ রেখে দেওয়ার গল্প এই বাংলার মানুষ ভুলে যায়নি। ২০০৮ সালের সেই প্রস্তাবিত ফুটবল অ্যাকাডেমি আজ বিশ বাঁও জলে।

মার্টিনেজ, রোনাল্ডিনহো, লোথার ম্যাথাউসের মতো কত বিশ্বকাপার শহরে এসেছেন আর ফিরে গিয়েছেন। এ বার সল্টলেক যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী তারকা লিয়োনেল মেসিকে এনে হল বিশৃঙ্খলায় ভরা এক ন্যক্কারজনক নাটক।

হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কেটে মেসি প্রেমী মানুষ আজ সকালে একটি বারের জন্য মেসিকে দেখতে মাঠে এসেছিলেন। এক দর্শক ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলছিলেন,’ প্রিয় ফুটবলার মেসিকে দেখব বলে টাকা খরচ করে আমি বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু খারাপ আয়োজকদের জন্য মেসিকে দেখতেই পারলাম না।”

মেসি মাঠে ঢোকা ইস্তক ‘কিছু মানুষ’ মেসিকে ঘিরে রইলেন, মেসির সঙ্গে সেল্ফি তুললেন, অতি উচ্ছ্বাসে একেবারে লুটোপুটি খেলেন। মোটা টাকা খরচ করে মাঠে ঢোকা গ্যালারির মানুষগুলোর কথা তাঁরা একটি বারের জন্যও ভাবলেন না।

এর পরিণতি যা হওয়ার তাই হল! মেসিকে সরাসরি এক ঝলক দেখতে না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ল মানুষ। দর্শকাসনে থাকা মেসি ভক্তদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ আর ভাঙচুরে একেবারে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ঐতিহ্যের যুবভারতী।

ফিফার ফুটবল র‍্যাঙ্কিংয়ে আমরা এখন ১৪২ নম্বরে। এশিয়ান কাপের মূলপর্বে যাওয়ার লড়াইয়ে নেমে বাংলাদেশের কাছেও হেরে যাই। দেশে ভাল ফুটবলারের বড়ই আকাল। তাই অবসর নিয়েও সুনীল ছেত্রীকে জাতীয় দলে ফিরতে হয়।

এশিয়া মহাদেশ থেকে জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া নিয়মিত বিশ্বকাপে খেলছে। আমরা বিশ্বকাপ ফুটবল দূরের কথা, এশিয়া কাপের মূলপর্বে যাওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারি না। দেশে জে লিগ চালু করে জাপান ফুটবলে কতই এগিয়ে গিয়েছে। সেখান আমাদের দেশে? ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কবেই দেশে আই লিগ চালু হল। শুরু হল আইএসএল। সেই আইএসএলও এখন মুখ থুবড়ে পড়ার মুখে।

একটা সময় বাংলার ফুটবলার ছাড়া ভারতীয় ফুটবল দল তৈরিই হত না। গোষ্ঠ পাল,শৈলেন মান্না,পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়,চুনী গোস্বামী,সুব্রত ভট্টাচার্য,ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়দের রাজ্যের আজকের ছবিটা কেমন? নতুন করে আর বলার প্রয়োজন নেই। অতি উজ্জ্বল ইতিহাসে মোড়া বাংলার ফুটবল এখন রীতিমতো ধুঁকছে। ইস্টবেঙ্গল,মোহনবাগান এখন কাগুজে বাঘ। ক্রমশই ফুটবলের ঐতিহ্য হারাচ্ছে কলকাতার গড়ের মাঠ। ফুটবলের শহরটা ইদানীং রাজনীতির শহরে পরিণত হয়েছে।

আজও এই বাংলায় কোনও আধুনিক ফুটবল অ্যাকাডেমি গড়ে উঠল না। রাজ্য ফুটবল সংস্থা আইএফএ শীত ঘুমে। দাদারা চরম ব্যর্থ হলেও অল্প কয়েক দিন আগেই অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ে ভারতের খুদে ফুটবলারেরা ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ২০ নম্বরে থাকা শক্তিশালী ইরানকে হারিয়ে মূলপর্বে গিয়েছে। দারুণ সাফল্যই বৈকি! এই দলের গোলরক্ষক রাজরূপ সরকার উত্তর চব্বিশ পরগণার মছলন্দপুরের ছেলে। কিন্তু সে বেড়ে উঠছে কোথায়? ভিন রাজ্যের এক অ্যাকাডেমিতে।

যে রাজ্যের ফুটবলের ছবিটা এতটাই করুণ। সেই রাজ্যে বিদেশ থেকে মেসি,মার্টিনেজদের মতো বিশ্বকাপারদের এনে এই নাচানাচি কেন? তাও আবার টিকিট কেটে। এতে বাংলার ফুটবল একটুও কি এগোবে?

বিদেশ থেকে ভাল কোচ কিংবা প্রাক্তন তারকা ফুটবলারদের বাংলায় এনে বিশেষ ফুটবল ক্লিনিক আয়োজনের কথা ভাবা যেত পারে। এতে বরং খুদে ফুটবলাররা নতুন কিছু শিখতে পারবে। বাংলার ফুটবলও একটু হলেও এগিয়ে চলার দিশা পাবে। উঠে আসবে অনেক নতুন প্রতিভা। কিন্তু কয়েক ঘন্টার জন্য একজন বিশ্বকাপারকে ধরে এনে এমন ব্যবসা বন্ধ হোক। ফুটবল বাঙালির আবেগ। সেই সরল আবেগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করে টাকা তোলা অবশ্যই অন্যায়।

ছবি সৌজন্যে – তুষার পাটোয়ারি ও অদিতি সাহা।

More From Author

২৫তম চন্দননগর বইমেলা শুরু ২৩ শে ডিসেম্বর…।

Record-Breaking Gulveer Singh and Defending Champion Sanjivani Jadhav Set to Defend Indian Elite titles at the Landmark 10th Tata Steel World 25K Kolkata…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *