লিভারকে সুস্থ রাখতে জরুরি সঠিক খাদ্যাভ্যাস -ডাঃ শ্রীকান্ত মোহতা….।

Spread the love

লিভারকে সুস্থ রাখতে জরুরি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এ কথা সাংবাদিকদের জানালেন ডাঃ শ্রীকান্ত মোহতা,কনসালট্যান্ট গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এবং হেপাটোলজি, নারায়ণা হসপিটাল, হাওড়া। ডাঃ মোহতা বলেন ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, যা হেপাটিক স্টিয়াটোসিস নামেও পরিচিত। এটি লিভার বা যকৃতের খুব কমন এক সমস্যা। সারা বিশ্বে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এতে আক্রান্ত হন। এটি এমনই এক সমস্যা যেখানে লিভারের কোষে চর্বি জমে লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। যদিও লিভারে অল্প পরিমাণ চর্বি স্বাভাবিক, কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি মারাত্মক সমস্যা ডেকে আনে। ফ্যাটি লিভারের উপসর্গ এবং কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করে লিভারকে সুস্থ রাখবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক—

ফ্যাটি লিভার কী?
সাধারণত লিভারের ওজনের ৫%–এর বেশি চর্বি বা ফ্যাট যখন লিভারের কোষে জমে, তখন তাকে আমরা ফ্যাটি লিভার বলি। ফ্যাটি লিভার মূলত দু’ধরনের— ১. মেটাবোলিক অ্যাসোসিয়েটেড স্টিয়াটোসিস লিভার ডিজিজ (এমএএসএলডি) এবং অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এএফএলডি)। এমএএসএলডি–এর কারণে স্থূলতা বা ওবেসিটি, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের দেখা দেয়। এএফএলডি–র কারণ অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ্যপান।

ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ ও উপসর্গ :-
প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্যাটি লিভারের তেমন কোনও উপসর্গ থাকে না, তাই মেডিক্যাল টেস্ট ছাড়া রোগ নির্ণয় বেশ কঠিন। যাইহোক, ফ্যাটি লিভারের সমস্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। যেমন— ● ক্লান্তি: অস্বাভাবিক ক্লান্তি‌বোধ এবং দুর্বলতা ● পেটে অস্বস্তি ● ওজন কমে যাওয়া ● লিভার বেড়ে যাওয়া ● জন্ডিস: ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া, যদিও এটি কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

কখন একজন মানুষ ডাক্তারের কাছে যাবেন?
দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্তি বা দুর্বলতা, মাত্রাতিরিক্ত ওজন হ্রাস বা পেটে অস্বস্তি অনুভব করলে একটুও সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়া যাঁরা স্থূলতা বা ওবেসিটিতে আক্রান্ত, যাঁদের ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে বা যাঁরা অত্যধিক মদ্যপান করেন, তাঁরা ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাঁদের নিয়মিত লিভারের পরীক্ষা করা জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় রোগের জটিলতা যেমন কমায়, তেমনই তা রোগীকে সুস্থ করে তোলার অন্যতম চাবিকাঠি।

ফ্যাটি লিভার কি বংশগত?
ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে জিনগত সম্পর্ক থাকতে পারে এবং এটি বংশানুক্রমিকভাবে বিকাশলাভ করতে পারে। কিছু জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এমএএসএলডি দেখা দিতে পারে, এর সঙ্গে যোগ রয়েছে জীবনযাপন বা লাইফস্টাইলের। বিশেষ করে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব এবং শরীরচর্চায় অনীহা ফ্যাটি লিভারের জন্য দায়ী। এছাড়া পরিবেশগত কারণ এবং কীধরনের জীবনধারায় আপনি অভ্যস্ত, তারও প্রভাব রয়েছে।

ফ্যাটি লিভার শনাক্তকরণে কী কী পরীক্ষা রয়েছে?
ফ্যাটি লিভার নির্ণ‌য়ে বেশ কিছু পরীক্ষা রয়েছে—
● রক্ত পরীক্ষা: লিভারের ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ বোঝার জন্য রয়েছে লিভার এনজাইম (এএলটি এবং এএসটি) টেস্ট।
● ইমেজিং টেস্ট: আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই–এর মাধ্যমে বোঝা যায় লিভারে কতটা ফ্যাট জমেছে।
● লিভার বায়োপ্সি: কিছু ক্ষেত্রে লিভারে ক্ষতির পরিমাণ এবং অন্যান্য অবস্থাকে বোঝার জন্য বায়োপ্সির প্রয়োজন হতে পারে।

লিভারকে সুস্থ রাখার ডায়েট
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে এবং লিভারকে সুস্থ রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। চলুন জেনে নিই লিভারকে সুস্থ রাখতে কেমন হবে ডায়েট—
● ব্যালেন্স ডায়েট: ডায়েটে থাকবে পরিমিত পরিমাণ ফল, সবজি, দানা শস্য এবং লিন প্রোটিন।
● স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: অলিভ অয়েল, বাদাম এবং অ্যাভোকাডোর মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উৎসগুলো বেছে নিন।
● চিনি এবং রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন: চিনিযুক্ত পানীয়, মিষ্টি এবং ময়দা এড়িয়ে চলুন।
● মদ্যপান এড়িয়ে চলাই ভালো।
● হাইড্রেশন: লিভারের কার্যকারিতাকে ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খান।

মনে রাখুন
লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো চললে ফ্যাটি লিভার থেকে সুস্থ জীবনে ফেরা সম্ভব। রোগের লক্ষণ এবং রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো সম্পর্কে অবগত থাকুন। সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে লিভারের পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। নিয়মিত হেলথ চেকআপ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ফ্যাটি লিভারের পাশাপাশি শরীরকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।‌

 

More From Author

Manipal Hospital Dhakuria organized Health Awareness Talk on the eve of World Liver Day…

Celebrate Earth Day with Eco-Friendly Kitchen Alternatives That Make a Difference….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *