বিশেষ প্রতিনিধি : কলকাতা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫। বেদমন্ত্র পাঠ এবং বিশিষ্ট অতিথিদের প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার হয়ে গেলো প্রাক- শারদীয়া অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে, ব্যারাকপুরের স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে হাজির ছিলেন সমাজের বিশিষ্ট মানুষজন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আধিকারিকদের উপস্থিতিতে সারাদিন ধরে হল নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মিশেলে ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক অধ্যাপিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত একাধিক অনুষ্ঠান ছিল নজরকাড়া। দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন, মহিষাসুরমর্দিনীর মত পৌরাণিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সাম্প্রতিক কালের সমাজ ব্যবস্থা এবং নারী শক্তির বিকাশ, নারী ক্ষমতায়ন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান ছিল চোখে পড়ার মতো নজর কেড়েছে সমাজের বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের মহিষাসুরমর্দনী অনুষ্ঠান ।
ফি বছরের মত, স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে আয়োজিত এমন প্রতিযোগিতামূলক প্রাক শারদীয়া অনুষ্ঠানের জন্য কার্যত মুখিয়ে থাকে রাজ্যের একধিক সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বছরও একই ভাবে একাধিক বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিয়েছিলেন নানা প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে। দেবী দুর্গার বন্দনা, আরাধনা থেকে শুরু করে একক নৃত্য, সঙ্গীত, দলগত নৃত্যসংগীত এনে দিয়েছিল একদিনের এই অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা । টানা আট ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে, কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী, কর্মী, অধ্যাপক অধ্যাপিকা এবং অতিথিদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল অনুষ্ঠানের সাফল্য।
আচার্য ডক্টর নন্দন গুপ্ত থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যলয়ের জন্মলগ্ন থেকে নানাভাবে সহায়তার জন্য হাত বাড়ানো সমাজের বিশিষ্ট বিদ্বজনদের উজ্জল উপস্থিতি মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গণ কে করে তুলেছিলো আরও প্রাণবন্ত। স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রছাত্রী, প্রতিযোগীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যলয়ের কর্মকর্তা এবং আধিকারিকদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মত। প্রতিযোগিতামূলক নানা অনুষ্ঠানের জন্য আগত বিচারকমণ্ডলী এবং প্রতিযোগীদের জন্য তাঁদের দের সুচিন্তিত পরামর্শ ছিল উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের শুধু পঠনপাঠনই নয়, তাদের কর্মসংস্থান এবং সার্বিক বিকাশের বিষয়কে বরাবর গুরুত্ব দিচ্ছেন স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর তাই এমনই অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিষ্ঠানের নান্দনিকতায় যাতে কোনো খামতি না থাকে তার প্রতি বিশেষ নজর ছিল প্রতিষ্ঠানের। তাই দিন কয়েক আগে থেকেই কার্যত সাজোসাজো রব ছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কে নানাভাবে সাজিয়ে তুলেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। সোলার নানা কাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন হস্তশিল্প দিয়ে সুন্দর ভাবে সাজানো ছিল গোটা ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যলয়ের পরিসরে মাল্টিমিডিয়া এবং এনিমেশন বিভাগের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের তৈরি পাট এবং সোলা দিয়ে তৈরি একচালার প্রতিমা বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছে প্রাক শারদীয়ার অনুষ্ঠানে। পরিসরে হস্তশিল্পের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে মাল্টিমিডিয়া এবং এনিমেশন বিভাগের কাজ কে ছাত্রছাত্রীদের আলপনা এনে দিয়েছিল অন্যমাত্রা। ভিড়ে ঠাসা ওই চত্বরে স্বাভাবিক কারণে বসেছিল পুজোর আড্ডা। আর তাতেই আমন্ত্রিত ছিলেন দেবশঙ্কর হালদার, গৌতম হালদার, শ্রীজাত, শুভ্রা বসু, দেবাশিস রায়, তীর্থ ভট্টাচার্য, দেবদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিন্দ্য বসু, চন্দন সেন, প্রদীপ ভট্টাচার্য মত বিদ্বজনেরা। কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, কর্মী, আধিকারিক এবং অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের ঠাসা ভিড় চাক্ষুষ করল অন্যরকমের পুজোর আড্ডা। পাট, সোলার সাজ দিয়ে একচলার প্রতিমায় চমক এবং আলপনা সহ অন্য হস্তশিল্প মহানগরের অন্যতম বড় বাজেটের পুজো মণ্ডপ কে কার্যত টেক্কা দিচ্ছিল। অনেকের সেলফির ধুম এবং ভিড়ে ঠাসা ওই চত্বরে, অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কে।
এই অনুষ্ঠানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে আচার্য ডক্টর নন্দন গুপ্ত, রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার এবং গ্রন্থাগার পরিষেবা বিভাগের মুখ্য সচিব আইপিএস ড. রাজেশ কুমার, কলকাতার পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শান্তনু সিনহা বিশ্বাস, উপাচার্য অধ্যাপক সুব্রত কুমার দে, সিওও সৌরভ অধিকারী, রেজিস্ট্রার পিনাক পানি নাথ, হাইটেক এবং টিউটোপিয়া কর্ণধার সুব্রত রায়, ড. দীপঙ্কর ঘোষ, অধ্যক্ষ , এস আর লাহিড়ী মহাবিদ্যালয়, নদিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিক ক্লাবের মেন্টার তথা বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী শাহানা বক্সি, মিউজিক ক্লাবের অতিথি অধ্যাপিকা সৌমী ভট্টাচার্য, ডিরেক্টর প্রফেসর দেব নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিন অফ লাইফ সায়েন্স, প্রফেসর নিমাই চন্দ্র সাহা, সিএএ হিউম্যানিটিজ এন্ড সোস্যালসায়েন্স প্রফেসর মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিরেক্টর প্রফেসর রঞ্জন চক্রবর্তী, ডিরেক্টর হিউম্যানিটিজ এন্ড সোস্যাল সায়েন্স এন্ড হেড জার্নালিজম এন্ড মাস কমিউনিকেশন প্রফেসর প্রমিতি রায়, ডিরেক্টর প্রফেসর অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, স্কুল অফ এগ্রিকালচার ডিরেক্টর প্রফেসর স্বপন দত্ত, পারফর্মিং আর্টস বিভাগের ডিরেক্টর প্রবীর গুহ, ডেপুটি রেজিস্ট্রার তন্ময় মজুমদার, অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অভিষেক ধর এবং শুভম ভট্টাচার্য, ডেপুটি কন্ট্রোলার অফ একজামিনেশন সৌরভ সাহা প্রমুখ।