স্বামীজি ও তাঁর দর্শনের মধ্যে এক চিরনবীনের সন্ধান পেয়েছিলেন নিবেদিতা….।

Spread the love

স্মরণঃ ভ গ নি নি বে দি তা

বাবলু ভট্টাচার্য : তিনি ভারতে আগন্তুক। কিন্তু তাঁর চাইতে বড় ভারতবাসী কে? মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল সম্পর্কে ভাবতে বসলে এ কথাই সবার আগে মাথায় ঘুরপাক খায়। কোনও গিমিকের বশবর্তী হয়ে নয়, কোনও প্রাপ্তির আশায় নয়, ঠিক কেন যে এক সাতাশ-আঠাশ বছরের তরুণী লন্ডনের মতো এক আধুনিক শহর ছেড়ে কাহিনি, কিংবদন্তি আর কুসংস্কারে মোড়া (সেই সময়ে ইউরোপে ভারত সম্পর্কে এমন ধারণাই প্রচলিত ছিল) ভারতবর্ষে চলে এলেন, তা আজও বুঝে ওঠা দুরূহ।

এক তরুণ ভারতীয় সন্ন্যাসীর মধ্যে কী এমন দেখেছিলেন এই নারী, যে উনিশ শতকের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইংল্যান্ডের ভোগবাদ তাঁর কাছে তুচ্ছ বলে মনে হয়েছিল।

তা হলে কি ধরে নিতে হবে, কোনও এক আশ্চর্য তারুণ্যের প্রণোদন কাজ করেছিল এই তরুণীর সন্ধান-সূত্রে? ব্রিটেনে দ্রুত থেকে দ্রুততর শিল্পায়ন, সভ্যতার একবগগা অর্থ তৈরি করে তা বিশ্বের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা আর ক্রমাগত কলোনির বিস্তার মার্গারেট তীক্ষ্ণ মেধায় প্রশ্নাতীত বলে মনে হয়নি। তিনি তারুণ্যের অন্য অর্থের সন্ধান করছিলেন।

১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

আয়ারল্যান্ডের এক ধর্মপ্রাণ পরিবার থেকে আগত এই তরুণী খ্রিস্টধর্মের অন্য ব্যঞ্জনাকে জানতেন। তিনি জানতেন, ধর্মাশ্রয় বা প্রতিষ্ঠানের চাইতেও বড় এ মানবজমিন। আর সেই বিন্দুতে দাঁড়িয়েই কি তিনি স্বামী বিবেকানন্দ নামক আর এক তরুণের মধ্যে দেখেছিলেন ঝড়ের প্রতিশ্রুতি? না, এই ঝড় বিধ্বংসী নয়। এই ঝড় দিনবদলের বার্তাবাহী।

স্বামীজিকে অনুসরণ করে কলকাতায় চলে আসা এবং বিবেকানন্দের কাছে ব্রহ্মচর্য ব্রতে দীক্ষা নেওয়ার সময়ে কি এই তরুণী জানতেন না, ব্রহ্মচর্য মানে কী? জানার উপায় তেমন নেই। কিন্তু ভাবতে ইচ্ছে করে, জীবনের একটা নতুন মানে, তারুণ্যের একটা নতুন ব্যঞ্জনাকেই নিবেদিতা খুঁজে পেয়েছিলেন এই ব্রাতধারণের মধ্যে।

হাজার হাজার বছরের এক ঐতিহ্য, যেখানে জরা নেই, মারী নেই, এমনকী মৃত্যু নামক প্রহেলিকাটিও অনুপস্থিত, সেই ভূমিতে দাঁড়িয়ে চিরনবীন সপ্তর্ষিমণ্ডল আর চিরযুবা কালপুরুষের নক্ষত্রছায়ায় তিনি জেনেছিলেন, এখানেই একমাত্র অমৃতের পুত্রকে আহ্বান করা যায় প্রত্যক্ষ ভাবে। কোনও সন্দেহ নেই স্বামীজি ও তাঁর দর্শনের মধ্যে এক চিরনবীনের সন্ধান পেয়েছিলেন নিবেদিতা।

স্বামীজির প্রেরণা কিন্তু তাঁকে এমন একদিকে নিয়ে যায়, যা তাঁর সঙ্গে তাঁর সতীর্থদের দূরত্ব তৈরি করে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পরিচয় যে সময়ে, রবীন্দ্রনাথও সেই সময়ে এক সম্ভাবনাময় তরুণ কবি মাত্র।

মাত্র ৪৩ বছর বয়সে চলে যান নিবেদেতা। কী হতো যদি পরিণত বয়স পর্যন্ত তিনি থাকতেন? স্বপ্নভঙ্গ? অরবিন্দ চলে গিয়েছেন আধ্যাত্মলোকে। জগদীশচন্দ্র তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকুও পাননি। টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে অনুশীলন সমিতি। না। এতে ভেঙে পড়তেন না বলেই মনে হয় মার্গারেট।

হয়তো আফ্রিকা ফেরত এক তরুণ ব্যারিস্টারের সঙ্গে গড়ে উঠত তাঁর সেতুবন্ধ। হয়তো দেখা যেত তাঁকে অসহযোগের দিনে স্বপ্নের ভারত গড়ার কাজে নিবেদিত অবস্থায়। কল্পনা বটে। কিন্তু, এমন তো হতেই পারত। তারুণ্যে তো সবই সম্ভব। নিবেদিতা জানতেন।

ভারতের গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায় অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নিবেদিতা। হাওয়া বদলের জন্য জগদীশচন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দার্জিলিঙে বেড়াতে যান তিনি।

নিবেদিতা ১৯১১ সালের আজকের দিনে (১৩ অক্টোবর) দার্জিলিঙে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

More From Author

Bhowanipur 75 Palli celebrates its 59th year by holding onto its faith in Sabekiyana where the pandal is being made with variety of Mountain Fruits….

মধ্যমগ্রামে গ্যালাক্সি গুরুকুল স্কুলের জন্য ৫০ লাখ টাকা অর্থ সংস্থান করতে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে পাড়ি দিচ্ছেন স্বপরিবারে জয়সওয়াল দম্পতি….।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *