মিষ্টি ছাড়া বাঙালি? সে তো পুজো ছাড়া মন্দির….!

Spread the love

“মিষ্টি-প্রেমিক বাঙালির দুই বাংলায় ভ্রমণ”
———————————————-
ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা।

আমি মিষ্টি প্রেমিক বাঙালি, মিষ্টি নিয়েই সুখ,
জীবনের মন্ত্র আমার – “রসে ভরা মুখ!”
শুধু খেতে নয়, ঘুরেও খেয়েছি,
দুই বাংলার মিষ্টি-মেলায় আনন্দে ভেসেছি।

প্রথমে পা দিলাম কলকাতার বুকে,
নবীনচন্দ্রের রসগোল্লা খেয়ে ভেসে গেলাম সুখে।
বাগবাজারের সন্দেশ, নকুড়ের আবিষ্কার,
সাজিয়ে রাখে ইতিহাস, স্বাদে ঝরে তার।

শ্রীরামপুর বল্লভে খেলাম রজনীগন্ধা,
বহরমপুরের ছানা বড়া – আহা! প্রেমের ছোঁয়া ছন্দা।
সন্দেশে আজ কতো রকম, কাজু-নারকেল-রজনী,
প্রতিটি কামড়ে জেগে ওঠে, বাংলা-মায়ের ধ্বনি।

বর্ধমানের ডাক এলো – “চল বন্ধু আমার,
সীতাভোগ আর মিহিদানায় যেন রাজার আদর!”
লর্ড ক্যানিংও মুগ্ধ হয়ে দিয়েছিলেন দাম,
আজো মিহিদানার স্বাদে বাজে বাঙালির গান।

শক্তিগড়ের ল্যাংচা, ওরে কী যে রস!
তেলে ভাজা, ছানায় ভরা, গড়িয়ে পরে কষ ।
রানাঘাটের পান্তুয়া, মনে করায় কালো জাম,
আর কাটোয়ার “পরানের পান্তুয়া”, যেন প্রেমের নাম!

নবদ্বীপের লাল দই – খোলের পাত্রে শোভা,
মুখে দিলে মধুর ধারা, প্রেমের মনোলোভা।
জনাইয়ের মনোহরা, গুড়ের ছোঁয়ায় ভরা,
গঙ্গারামপুরের ক্ষীর দই, সুধার ধারায় ধরা।

পাঁশকুড়ার মুগের জিলিপি, মোহে মোড়া পাক,
মুগডাল আর চিনির বাঁধনে, অপূর্ব তার স্বাদ।
কৃষ্ণনগরের সরভাজা, সরপুরিয়ার কীর্তি,
সেই সাথে রামপুরহাটের রসমালাই – পূর্ণ তৃপ্তির সৃষ্টি।

এবার চললাম ওপার বাংলার পথে,
নতুন মিষ্টির খোঁজে, হৃদয় গুনগুন রথে।
কুমিল্লার রসমালাই – মুক্তা দুধে ভাসে,
মাতব্বর দোকানের হাতে স্বর্গ যেন হাসে।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, সে তো রাজা মিষ্টির,
ধলেশ্বরীর স্রোতে গড়া, হাজারো গানে বিস্তির।
মুক্তাগাছার মণ্ডা, দুই শতাব্দীর পুরনো গর্ব,
ক্ষীর, ঘি আর এলাচে বাঁধা, প্রেমের মধুর জ্বর্দ।

নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টি, আকারে বিস্ময়,
খালি চোখে দেখলে ভেবে বসো, তোষকের আবয়।
নওগাঁর প্যারা সন্দেশ, ঘন দুধের ছোঁয়া,
প্রতি কামড়ে মন যেন হয় সুধার কোয়া ৷

বগুড়ার দই – সে তো বিশ্বজয়ের প্রতীক,
ঘন, টকটকে, স্নিগ্ধতায় করে হৃদয় স্নানে সঠিক ।
দিনাজপুর, উলিপুরের ক্ষীরমোহন – মুখে দিলে মধু,
আর নাটোরের কাঁচাগোল্লা, নামেই কাঁচা, স্বাদে রঘু!

রাজশাহীর রস কদম, চিরতরুণ প্রেম,
যশোরের জামতলার রসগোল্লা – আহা কী যে মেম!
মেহেরপুরের সাবিত্রী, মালদহের রসকদম,
চৈতন্যদেবের ছায়া যেন ছোঁয়ায় মধুর কম্পন।

আমার এই মিষ্টির পদযাত্রা, দুই বাংলার বুকে,
স্বাদের খনি, সংস্কৃতির ধ্বনি, হৃদয়ের অমূল্য সুখে।
মাটির টান, দুধের গান, ছানার প্রেমে বাঁধা,
প্রজন্ম ছুঁয়ে চলে যায়, এই মিষ্টির মহাকাব্যসাধা।

তাই বলি–
“মিষ্টি ছাড়া বাঙালি? সে তো পুজো ছাড়া মন্দির!”
“পশ্চিমে-পূর্বে, জিভে-প্রাণে, মিষ্টির ছন্দে অস্থির ।”
“দুই বাংলায় বাজুক তাই, ছানার-দুধের বীণা,
আমরা মিষ্টির বাঙালি, তাতেই বাংলা চেনা ৷

More From Author

Eastern India’s aluminium extrusion sector emerges as growth engine…

Salesforce and Sister Nivedita University Announce First-of-its-Kind Academia-Industry Collaboration in Eastern India…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *