নিগমানন্দ ঠাকুর : গোয়া, ২৫ আগস্ট, ২০২৫। ইহলোকে থাকার পর পরলোকে চলে গেলে কি মানুষের জনপ্রিয়তা বাড়ে ? বিশেষ করে তিনি যদি আবার চলচ্চিত্র তারকা হন । কথাটা এই প্রসঙ্গে আসছে সোমবার ২৫ আগষ্ট, ২০২৫ এই বঙ্গের একজন জনপ্রিয় নায়কের মৃত্যুর পরে । নায়কের নাম “জয় ব্যানার্জী” । একটা সময় সকল দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে আজ সমাজ মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে প্রচুর লেখালেখি । আজ সকলেই তাঁর জীবন চর্চায় ব্যস্ত । অথচ বাস্তব জীবনে সম্পূর্ণ উল্টো । একসময় এই নায়কের জীবনে ঘটে গেছে নানা দুর্ঘটনা। কাজের জগতে এবং পারিবারিক জগতে তিনি যখন বিপর্যস্ত তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে মানসিক সাহস যোগানোর মানুষের খুবই অভাব ছিল । সুপুরুষ এই নায়ক জয় ব্যানার্জী যদি আশির দশক পেরিয়ে নব্বইয়ের দশকেও স্বমহিমায় পর্দায় থাকতেন তবে অনেক নায়ক ও অভিনেতা’র ঘুম কেড়ে নিতেন । অনেকের হয়ত জানা নেই ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া বিদেশ সরকার পরিচালিত এবং রাহুলদেব বর্মন সুরারোপিত জয় ব্যানার্জী, দেবশ্রী রায়, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী ও মধু কাপূর অভিনীত “অপরূপা” সিনেমাটি ছিল প্রথম বাংলা সিনেমা যার শ্যুটিং হয়েছিল বিদেশে ।
সেই সিনেমা থেকেই জয় ব্যানার্জী’র পায়ের তলায় মাটি জমতে শুরু করে । যে মাটি শক্ত হয় “চপার” ও পরবর্তী সময়ে “হীরক জয়ন্তী” সিনেমার পরে । আবার একসময়ে এই নায়কই কাজের অভাবে যাত্রা জগতে নাম লেখাতে বাধ্য হন । তারপর থেকেই তাঁর জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে । খুব কাছে থেকে মেলামেশা করে যেটুকু দেখেছি একজন হাসিখুশি সহজ সরল মানুষ ছিলেন জয় ব্যানার্জী । খুব খেতে ভালোবাসতেন । বিশেষ করে গলদা চিংড়ি । কয়েকবছর আগেও কলকাতায় বাইপাসের ধারে এক শ্যুটিং চলাকালীন তিনি একজন পরিচালকের কাছে গলদা চিংড়ি খাওয়ার আবদার করেন এবং সেখানে একেবারে ছ’টা গলদা চিংড়ি খেয়েও নেন । তাঁর প্রথমবার ভোটে দাঁড়ানো, প্রথম প্রচার শুরু কলকাতার লেক কালীবাড়িতে পুজো দিয়ে এসবের সাক্ষী থেকে দেখেছি যে কোন কাজে কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন তিনি । বহু ছোট বড় ঘটনা মনে থাকবে বহুবছর । জয় ব্যানার্জী’র বেহালার বাড়িতে যতবার গিয়েছি ততবার দেখেছি ভালো কাজ ও ভালো অভিনয়ের জন্য ছটপট করতেন ।
কেন জানি না বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্র পরিচালকেরা জয় ব্যানার্জী’র মতো একজন ভালো অভিনেতাকে দূরে সরিয়ে রাখলেন । বিগত কয়েক বছর তাঁর কাজের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর শরীর । কাজ পাগল মানুষটা মাত্র ৬২ বছর বয়সেই কাজের জগৎকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন অন্য জগতে । আর মেকাপ রুমে বসে গল্প হবে না । ভালো থাকবেন জয়’দা ।
