প্রবীর রায় : প্রযোজক পরিচালক ও অভিনেতা, কলকাতা, ২০ নভেম্বর, ২০২৫। আজ থেকে ঠিক ৮ বছর আগে, আজকের দিনে , বিরল রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেনা।
আমাদের যুবাকালে “প্রিয় সুব্রত” নাম খুবই পপুলার ছিল । নক্সালদের সঙ্গে দুজনের লড়াই আজও মনে পরে । আমার সঙ্গে প্রিয়দা র আলাপ ১৯৮২ সালে “প্রথম জওহরলাল নেহেরু ইন্টারন্যাশন ইনভিটেশন গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট” এর সময়ে । প্রিয়দা তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন এর।
সেই প্রথম ভারত এ পৃথিবী বিখ্যাত প্লেয়াররা আসবেন খেলতে। যেমন ফ্রাঞ্চিসকলি , রামোস ইত্যাদি। খেলা হবে কলকাতায় ইডেন গার্ডেন্স এ। তখনও যুবভারতী তৈরি হয়নি।
দূরদর্শন তখন সাদা কালো !! Protopack ক্যামেরাতে তখন কাভারেজ হয় !! আমি প্রিয়দাকে গিয়ে বললাম, আমি colour coverage করবো with 5 ক্যামেরা অনলাইন অপারেশন। আর প্রত্যেক দিন প্লেয়ার , কোচ , সেই খেলার ভুল, ভ্রান্তি , সব দেখতে পারবেন। তদানীন্তন কোচ পি কে ব্যানার্জি তো শুনে খুবই এক্সসাইটেড। ভারতে যা তখন দুর্লভ।
প্রিয়দা সব শুনে বললেন “তুমি পারবে ?? ….তাহলে তো কলকাতায় একটা ইতিহাস সৃষ্টি হবে !!” আমি বললাম পারবো!! তদানীন্তন জেনারেল সেক্রেটারি অশোক ঘোষ এর সঙ্গে পরামর্শ করে উনি আমাকে approval দিলেন !! আর এতে আমাকে সাহায্য করলেন বেনু দাসগুপ্ত (Sinclaires Hotels and travels এর একজন ডিরেক্টর) ।
সেই প্রথম ইন্ডিয়া তে colour coverage হবে !! দূরদর্শন প্রথম শুরু করে নভেম্বর এ Delhi Asiad এর সময় !! টুর্নামেন্ট শুরু ১৬ফেব্রুয়ারী, ১৯৮২ !! ইন্দিরা গান্ধী ওপেন করবেন। কলকাতায় তখন সাজ সাজ রব !! প্রথম ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়া তে ।
১৫ ফেব্রুয়ারী, আগের দিন রাতে হিস্ন্দুস্থান পার্ক এ অশোক ঘোষ এর বাড়িতে আমাকে ডেকে প্রিয়দা জিজ্ঞসা করলেন “ডোবাবে না তো ?”…কলকাতায় প্রথম ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট আর কাভারেজ করছে একজন বাঙালি !! সবার কি উৎসাহ !! তখন প্রিয়দা সবসময়ে উৎসাহ দিয়ে গেছেন !! আমার পুরো set up এসেছিল জাপান থেকে !!
ক্লাব হাউস থেকে উনি কলকাতা দূরদর্শন এর coverage replace করে, আমার coverage টেলিকাস্ট করা শুরু করলেন !! কারণ আমারটা ছিল colour coverage , কলকাতা দূরদর্শন এর ছিল সাদা কালো. বিদেশী প্লেয়ারদের সামনে উনি রঙ্গিন প্রচার দেখাতে চেয়েছিলেন !!
আজ খুব মনে পরে, আমার ক্যারিয়ার এর শুরুতে ওই break টা খুব দরকার ছিল !! প্রিয়দা না থাকলে ,ওনার উৎসাহ না থাকলে বোধহয় এতবড় কাজ করতে পারতাম না !!
ওনার অবদান কোনদিন ভুলতে পারবো না। আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম এই বিরাট আর বিরল মানুষটা কে। ওনার আত্মার চির শান্তি কামনা করি । যেখানে থাকুন ভালো থাকুন, শান্তিতে থাকুন ।


