ডাঃ দীপালোক বন্দোপাধ্যায় : কলকাতা, ৩১ মার্চ, ২০২৫।
“ইমামবাড়া ” , মজলিস বা আলোচনার স্থান ৷ইমামদের থাকার জায়গা ৷ মহরম উদযাপনের জন্য তৈরী হয় ৷ শিয়া মসজিদের পাশে থাকে ৷ ইসলামের প্রধান দুটি শাখার একটি “শিয়াহ্ “! ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা ৷ প্রায় পনেরো শতাংশ ৷ শিয়া ইসলামের অনুসারীদের শীআ বলে ৷ যা শী আতু আলীর বা আলীর সমর্থক ৷ এদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন সালমান আল ফারসি , আবু যার আল গিফারী , মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ , ইবনে ইয়াসীর প্রমুখ ৷ মাওলা অর্থে এঁরা ভাবেন নেতা ৷ যেখানে সুন্নীরা বন্ধু বা ঘনিষ্ঠ ৷ শিয়ারা আলীকে প্রথম ইমাম গণ্য করে ৷ শিয়াদের তিনটি ফেরকা বা উপদল ৷ এরমধ্যে প্রায় ৮৫% ইসনা আশারিয়া ৷ অন্যরা ইসমাইলি ও জায়েদি ৷ শিয়াহ্ দের কলেমা হলো
“লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহ আলি উল ওলিউল্লা বসিও রসুলুল্লা “!
শিয়াহ্ আরবী শব্দের মানে শিষ্য ৷শিয়াহ্ – ই- আলি বা হজরত আলির পক্ষ অবলম্বনকারী বা অনুগামী ৷ শিয়ারা “খালিফা” শব্দের বদলে “ইমাম ” কথাটি ব্যবহার করেন ৷ বহু জায়গায় আমি ইমামবাড়া দেখেছি ৷ ইরান , ইরাকে একে বলা হত “হোসেনীয়া ” ৷ইরানে সাফাভি বংশীয় শাসকরা প্রথম তা গড়ে তোলেন ৷ কাস্পিয়ান এলাকায় মহরম পালনের এই জায়গাকে “তাকিয়া” বলা হত ৷ ভারতীয় উপমহাদেশে তাকেই ইমামবাড়া / আশুরাখানা / আজাখানা বলা হয় ৷ দিল্লীতে ১৭০৮ সালে সফদর জং উপমাহাদেশে প্রথম এমন ভবন তৈরী করেন ৷ তাঁর নাতি আসাফউদ্দৌলা লক্ষ্নৌতে “ইমামবাড়া আসাফী” তৈরী করেন ৷ যা বিশ্ববিখ্যাত ৷ হুগলীর হাজি মহম্মদ মহসিনের ইমামবাড়া ও মুর্শিদাবাদের ইমামবাড়া বাংলার অন্যতম দ্রষ্টব্য ৷ হুগলীর ইমামবাড়াটি দানবীর হাজী মহম্মদ মহসীনের স্মৃতিতে ১৮৬১ সালে স্থাপিত হয় ৷ এদের ফেরকা ইসনা আশারিয়া ৷ তখনকার দিনে পৌনে তিন লক্ষ টাকা খরচে ২০ বছর ধরে তৈরী হয়েছিল ৷দু’তলা বাড়ীতে ত্রিভূজাকৃতি আঙিনায় রয়েছে অনেকগুলি ঝর্ণা ও কৃত্রিম জলাশয় ৷ স্থপতি কেরামতুল্লা খানের অসাধারন কাজ ৮৫ মিটার উঁচু দুটি স্তম্ভ ৷ যাতে রয়েছে ১৫২ টি করে সিঁড়ি ৷তার বিখ্যাত ঘড়িটির দুটি কাঁটা ৷ যার সঙ্গে আছে তিনটি ঘন্টা৷ যথাক্রমে ৮০, ৪০ এবং ৩০ মণ ওজনের ৷ ঘড়ির চাবিটির ওজন ২০ কিলোগ্রাম ৷আছে একটি সূর্যঘড়ি ৷এখানে প্রবেশদ্বারে রয়েছে ঘড়ির টাওয়ার ৷দেওয়ালে রয়েছে কোরানের বাণী ৷ এসব জায়গায় কারাবালার শহীদদের উদ্দেশ্যে শোকপালন , তাজিয়া -গোমরা -মনজিল প্রথা সাড়ম্বরে পালিত হয় ৷ সাধারণতঃ দুটি তাজিয়া থাকে ৷ একটি হাসান এবং অন্যটি হোসেনের ৷ হাসানের তাজিয়া সবুজ এবং হোসেনের তাজিয়ায় লাল গিলাফ ব্যবহার করা হয় ৷ঢাকায় সদর ঘাট থেকে মহরমের মিছিলের সঙ্গে হোসেনী দালান ইমামবাড়া পর্যন্ত গিয়ে এসব দেখেছি ৷ সুফী সাধক খাজা মৈনুদ্দিন চিশতির মত অনেক সাধক আজও জাতি – ধর্ম নির্বিশেষে সবার শ্রদ্ধেয় ৷ ইরানের সুফি সন্তগন , বাংলা , অযোধ্যা ও বিজাপুরের নবাবরা ছিলেন শিয়া মতাবলম্বী ৷ মুর্শিদাবাদের ইমামবাড়ায় ! বাংলার বৃহত্তম ২০৭ মিটারের এই শিয়া মিলন ক্ষেত্র “ইমামবাড়া”টি ১৮৪৮ সালে তৈরী করেন নবাব নাজিম মনসুর আলি ৷ এর আগে এই জায়গায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা নির্মীত কাঠের ইমামবাড়া ছিল ৷ যা ,১৮৪৬ সালে আগুনে পুড়ে যায় ৷ এখনকার ইমামবাড়ার মাঝের মেদিনা খুব
সুন্দর ৷ইরাকের নাজাফ থেকে সৈয়দ আলী রেজা নামের এক ইসলামী পন্ডিত মুর্শিদাবাদে আসেন ৷ ঐ শিয়া ধর্মবেত্তার অনুপ্রেরণায় তা নির্মীত হয়েছিল ৷ আর পশ্চিমের বিশাল কক্ষে আছে হজরত
মহম্মদের কবরের নানান রেপ্লিকা ৷ তেমনি সঙ্কর প্রজাতির বিভিন্ন জীবজন্তুর মূর্তি !
