বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃত অক্ষয় কুমার দত্ত….।

Spread the love

ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা, ১৫ জুলাই, ২০২৫।
১৫ জুলাই বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃত ,গদ্য লেখক , মুক্তচিন্তার পুরোধা , শিক্ষাবিদ , সমাজ সংস্কারক ও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক পূর্বস্থলীর চুপী গ্রামের সুসন্তান ” অক্ষয়কুমার দত্তের ” ২০৬ তম জন্মদিনে আমার শ্রর্দ্ধাঘ্য ৷ আমাদের গ্রামের মানুষ হওয়ায় ছোট থেকে তাঁর সর্ম্পকে অনেক কিছু জেনেছি ও পড়েছি ৷ আমার বাড়ী সংলগ্ল তাঁর
নামাঙ্কিত “চুপী অকিঞ্চণ কুটীর ও অক্ষয় গ্রন্থাগার” ৷ এই লাইব্রেরীর সূর্বণ জয়ন্তীর সময় অনেক বছর
আগে আমার সম্পাদনায় একটি সুবৃহৎ ও তথ্য বহুল পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল ৷ তাতে অক্ষয় দত্ত সম্বন্ধে আমার সহ অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছিল ৷ বহু গুণী জন তাঁর সর্ম্পকে বলেছিলেন ৷ আমিও তাঁকে নিয়ে অনেকবার সুবৃহৎ প্রবন্ধ লিখেছি ৷ আজ আবার স্মরণ করছি সেই মহামানবকে যিনি সেই যুগে জন্মেও আজ সমান প্রাসঙ্গিক ৷ পূর্বস্থলীর চুপী গ্রাম নবদ্বীপ থেকে পাঁচ মাইল উত্তরে ৷ ২১ জুলাই ২০২২ রবিবার “নবদ্বীপ সাহিত্য সমাজ” নবদ্বীপ বকুলতলা প্রাক্তনী ভবনের
শ্রীচৈতন্য সেমিনার হলে তাঁর জন্ম দ্বি-শতবর্ষে এক
আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন ৷ যার বিষয় ছিল “অক্ষয় কূমার দত্ত : সমাজ ও ইতিহাসের ত্রিকাল “৷
সংক্ষেপে অক্ষয়কুমার সম্বন্ধে বলছি ৷ বহু ভাষাবিদ পন্ডিত জানতেন বাংলা , ইংরেজি , গ্রিক, ল্যাটিন , ফরাসি , জার্মান , হিব্রু , ফার্সি ও আরবি ৷ নানা ভাষা থেকে ও নিজস্ব প্রতিভায় তিনি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন ৷ অথচ ,শৈশবে পিতা পীতাম্বর দত্তকে হারিয়ে খুব দারিদ্রতার সঙ্গে কাটাতে বাধ্য হন৷ নানা পত্রপত্রিকায় প্রচুর সমৃদ্ধ লেখা লিখেছেন ৷ ১৪ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ ” অনঙ্গমোহন ” প্রকাশিত হয় ৷ ১৮৪১ সালে লেখা তাঁর “ভূগোল”বইটি প্রথম বাংলা ভাষার বিজ্ঞানাপুস্তক ! বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের প্রথম বাংলায় লেখা বই “পদার্থবিদ্যা(১৮৫৬) “ও তাঁর কলম থেকেই বের হয় ৷ বাংলা ভাষার প্রথম রম্য রচনা “চারুপাঠ” ও তাঁর ! বাংলা ভাষায়
প্রথম “যতি” চিহ্ন ব্যবহারের কৃতিত্বও তাঁর ! বাংলা
পরিভাষার বৃহদাংশ তাঁর করা ৷ যেমন – পদার্থ , তড়িৎ , জ্যোর্তিবিদ্যা , মাধ্যাকষর্ণ , গ্রহণ , অণুবীক্ষণ , দূরবীক্ষণ , পরিমিতি , রামধনু ,সুমেরু , কুমেরু , আগ্নেয়গিরি , মানমন্দির এমন শত শত !
১৮৫১ সালে প্রকাশিত তাঁর “বাহ্যবস্তুর সহিত মানব
প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার ” তৎকালীন সমাজে আলোড়ন তুলেছিল৷ তিনি ছিলেন প্রথম ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণকারীদের অন্যতম ৷ ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগিশের কাছে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করলে আমাদের চুপী – পূর্বস্থলী গ্রামের সমাজ তাঁকে বয়কট করে ৷ তিনি আদি ব্রাহ্ম সমাজের মুখপত্র
তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক হলেও ছিলেন পুরোপুরি কুসংস্কার মুক্ত ৷ ব্রাহ্ম চিন্তাধারার হিন্দু হয়েও তিনি বেদ ও আত্মা নিয়ে ধর্মীয় ধারনার বিরোধিতা করেছিলেন ৷ আসলে তিনি ছিলেন বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদে বিশ্বাসী অজ্ঞেয়বাদী ৷ ব্রাহ্ম সমাজে সংস্কৃতের বদলে বাংলায় উপাসনা চালুর পথিকৃত তিনি৷
তাঁর “ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায় ” বই দুটি হিন্দুদের নানা সম্প্রদায়ের ধর্ম কর্ম নিয়ে প্রথম প্রকাশিত নির্ভর যোগ্য দলিল ৷ যা তিনি বহু খেটে ক্ষেত্র সমীক্ষার পর লিখেছিলেন ৷ নতুন বিয়ের পর রাতে বৌয়ের সাথে সময় না কাটিয়ে ছাদে বসে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন ৷ অসহ্য মাইগ্রেণ মাথার যন্ত্রণায় ভুগেও কলম থামান নি ৷ প্রায় সব বিষয়ে অনর্গল লিখে গেছেন ৷ বালীতে নিজের বাড়ীতে তৈরী করেছিলেন মিনি বোটানিক্যাল গার্ডেন ৷ নাম দিয়েছিলেন ” শোভনোদ্যান “৷ ১৮মে ১৮৮৬ এখানেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷ তাঁর নাতি ছন্দের যাদুকর কবি “সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত “৷ ২০৬- তম জন্মদিনে অক্ষয় কুমার দত্তকে জানাই অকুন্ঠ প্রণাম ৷ যিনি দুশো বছর আগে জন্মালেও আজও তাঁর প্রাসঙ্গিকতা সমান ভাবে রয়েছে ৷

More From Author

GRIPIT Powers Amazon Prime Day with Global Tech Innovations for Indian Consumers…

Manipal Hospital, Saltlake performs 10-Hour high-risk Ovarian Cancer surgery with zero residual disease….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *