বিদায় কল্যাণ….
প্রবীর রায় : প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা। কলকাতা, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫। রবিবার রাতে আমার আরেক বন্ধু বিশিষ্ট অভিনেতা কল্যাণ চ্যাটার্জী না-ফেরার দেশে চলে গেলেন। বহু বছরের পরিচয় ওর সাথে।
১৯৭০/৭১ সাল নাগাদ দীনেন গুপ্ত “আজকের নায়ক” ছবির প্ল্যান করছেন। এ ছবিতে একটা রোলে আমি অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে গেলাম। ছবিটা মুক্তি পেয়েছিল ২৫শে ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ এ। ছবির নায়কের ভূমিকায় বুবু মানে শমিত ভঞ্জ। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে একটি নতুন মেয়ে নেওয়া হলো নায়িকার ভূমিকায় তার নাম সুমিত্রা মুখার্জী। আমরা ওর ডাকনামেই ডাকতাম ‘হাসি’ বলে।
ছবিতে আমি, বুবু (শমিত ভঞ্জ), কল্যাণ চ্যাটার্জী আর রবিদা (রবি ঘোষ) চার বন্ধু ছিলাম। এ ছাড়াও জয়শ্রী রায়, কালী বন্দোপাধ্যায়, ভারতী দেবী, নিরঞ্জন রায়, শেখর চ্যাটার্জী (এ ছবির কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যকার), চিনুদা (চিন্ময় রায়), পার্থ মুখার্জী, কাজল গুপ্ত, হাসি (সুমিত্রা মুখার্জী), গীতা দে ও আরও অনেকে ছিলেন। ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন অসীমাদি (ভট্টাচার্য), গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়, নেপথ্য কন্ঠে মান্না দে, আরতী মুখার্জী। এক কথায় বলতে গেলে চাঁদের হাট।
কল্যাণ ছিল প্রখ্যাত অভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায়ের নিজের ভাইপো। কল্যাণ চ্যাটার্জী, শত্রুঘ্ন সিনহা আর আসরানি – পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটের একই ব্যাচ।
কল্যাণ মুর্শিদাবাদের ছেলে। অনেক ছবিতে কাজ করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী, আপনজন, সাগিনা মাহাতো, ধন্যি মেয়ে, জন অরণ্য, বিকেলে ভোরের ফুল, পার, আদমি অউর অউরত, কাহানী – এ রকম বেশ কিছু নাম করা ছবিতে কাজ করেছিল।
ফিল্মের বাইরেও আমাদের প্রায় রোজ সন্ধ্যার আড্ডা ছিল ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের এর “হাটারি” রেস্টুরেন্টে। কল্যাণ ছাড়াও থাকতো শমিত, ভাস্কর, জয়া ভাদুড়ী, জয়শ্রী রায়, নিপন গোস্বামী এইরকম কয়েকজন। সন্ধ্যার এই আড্ডা ছাড়াও আমাদের প্রায়ই পার্টি হতো গড়িয়াহাট এর “মুরারকা পার্ক” বিল্ডিংয়ে বাপন মুখার্জী,কাকলী মুখার্জীর ফ্ল্যাটে। অসাধারণ সুন্দরী ও হোস্ট কাকলী দি ছিলেন এই পার্টির প্রধান আকর্ষণ।
কল্যাণের সাথে কাটানো নানা স্মৃতি মনে পড়ে ভালোও লাগছে আবার বিষন্ন বোধ করছি। ইদানীং আর তেমন দেখা হতো না। ওকে ফোন করলেই ফোন সুইচড অফ বলতো।
তবু স্মৃতি তো হারায় না কল্যাণ !


