সুদীপা চৌধুরী: মেদিনীপুর, ২৬ মে, ২০২৫। শক্তির আরাধনা এবং নারী শক্তির বিকাশ। সেই কবেই ঠাকুর জগতকে পথ দেখিয়ে গেছেন যে নারীই শক্তির আধার তাই তাকে জাগ্রত করতে তিনি আয়োজন করলেন ষোড়শী পূজার ১৮৭২ সালের ৫ই জুন।
আজ ফলহারিণী কালী পূজা এই দিনেই শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস, শ্রীশ্রীমাকে ষোড়শী রূপে পূজা করেছিলেন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ঠাকুরের বসবাসের ঘরে হয়েছিল পূজার আয়োজন। রাত নটার কিছু পরে শ্রীশ্রীমা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট পূজার আসনে এসে বসলেন। এতো আর কোনো সাধারণ পূজা নয়! এ যে স্বয়ং ভগবান, ভগবতীর চরণে তাঁর সাধনার সমস্ত ফল অর্পণ করবেন — তারই আয়োজন। এ যে বিশ্বের আধ্যাত্মিক ইতিহাসের এক এবং অদ্বিতীয় ঘটনা হতে চলেছে। এর আগে কখনো কোনো অবতার, কোনো সিদ্ধপুরুষ তাঁর বিবাহিত স্ত্রীর চরণে এভাবে নিজের সমস্ত সাধনালব্ধ ফল সমর্পণ করেননি। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে সরিয়ে রেখে সামাজিক দৃষ্টিতে দেখলে , এই অভূতপূর্ব ঘটনাকে মনে হয় , যুগ যুগ ধরে লাঞ্ছিতা ও বঞ্চিতা নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদানের ঘটনা।
মন্ত্রপূত কলসীর জলে ঠাকুর বারবার শ্রীশ্রীমায়ের অভিষেক করলেন। মা তখন অর্ধবাহ্যদশায় নিমগ্না। ঠাকুর প্রার্থনামন্ত্র উচ্চারণ করলেন –” হে বালে, হে সর্বশক্তির অধীশ্বরী মাতঃ ত্রিপুরসুন্দরী , সিদ্ধিদ্বার উন্মুক্ত কর ; ইঁহার শরীর মনকে পবিত্র করিয়া ইঁহাতে আবির্ভূতা হইয়া সর্বকল্যাণ সাধন কর। ” পূজাশেষে ঠাকুর ভোগ নিবেদন করলেন। তিনি সামনে আসীন দেবী শ্রীশ্রীমায়ের মুখে নিজের হাতে ভোগের থেকে কিছু মিষ্টি অর্পণ করলেন।
দেখতে দেখতে অর্ধবাহ্যদশায় থাকা শ্রীশ্রীমা সমাধিস্থা হলেন। ঠাকুরও মন্ত্রোচ্চারণ করতে করতে সমাধিরাজ্যে চলে গেলেন। স্বামী গম্ভীরানন্দ লিখেছেন – ” সে ভূমিতে আত্মসংস্থ পূজক ও পূজিতা আত্মস্বরূপে পূর্ণভাবে একীভূত হইলেন। ” পূজার শেষে ঠাকুর নিজেকে , তাঁর জপের মালা প্রভৃতি এবং তাঁর সাধনার সমস্ত ফল দেবীর চরণে চিরকালের মত অর্পণ করলেন ; তারপর মন্ত্রোচ্চারণ করতে করতে তাঁকে প্রণাম করলেন -” হে সর্বমঙ্গলের মঙ্গলস্বরূপে , হে সর্বকর্ম নিষ্পন্নকারিণী , হে শরণদায়িনী , ত্রিনয়নী, শিবগেহিনি গৌরি, হে নারায়ণি, তোমাকে প্রণাম করি। ”
পূজা শেষ হল। ঠাকুর শ্রীশ্রীমায়ের মধ্যে সুপ্ত দেবীত্বের পূর্ণবিকাশ সাধন করলেন সেদিন। পূজা শেষে নহবতের ঘরে ফেরার সময় শ্রীশ্রী মায়ের মনে হল ঠাকুর তাঁকে প্রণাম করেছিলেন। সে প্রণাম তিনি ফিরিয়ে দেননি। তিনি ঠাকুরকে মনে মনে প্রণাম করলেন এবং নহবতে ফিরে এলেন।
জয় মা , জয় ঠাকুর, জয় স্বামীজী,জয় গুরুদেব।।
